রবিবার, ২২ মে, ২০১১

চিঠি


ব্যাঙ্কের লকারে রাখা বড় গয়নার বাক্‌সোটা সব সময় খোলা হয় না।
তিন তাকের এই গয়নার বক্স যদিও বা মাঝে সাঝে খুলি ওর নিচের তাক অব্দি যাই না অনেককাল। কারণ আমি জানি, ঐ নিচের তাকে কোন গয়না রাখা নেই। আছে কিছু চিঠি। প্রেমপত্র বলাই ভাল।

গতকাল হঠাৎ করে উপরের তাক দুটি নামিয়ে নিচের তাকে চোখ রাখলাম। নীল, গোলাপি সব খাম। আমার নাম লেখা সেই খামে। ভেতরে সব চিঠি। একের পর এক তারিখ অনুযায়ী রাখা সব চিঠি। ব্যাঙ্কের ভল্টে বেশিক্ষণ বসে থাকার নিয়ম নেই তবুও বেশ অনেকক্ষণ বসে রইলাম সেই চিঠিগুলো হাতে নিয়ে। আর আশ্চর্য হয়ে গেলাম, আমার ভেতরে কোনো অনুভুতি জাগল না দেখে!

না। কো্নো অনুভুতিই জাগলো না। সেই আশ্চর্য ভাব নিয়েই বেশ খানিকটা সময় বসে রইলাম। কিছু স্মৃতি যেন খুঁজে পেতে বের করলাম। এই  সেই চিঠির গোছা। এক সময় যারা আমার কাছে এত মূল্যবান ছিল যে আমি তাদেরকে ব্যাঙ্কের লকারের নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিলাম। গয়নার বাক্সের সবচেয়ে গোপনতম জয়গাটি নির্দিষ্ট করেছিলাম তাদের জন্যে। মাঝে মাঝেই অকারণেই ব্যাঙ্কের ভল্টে গিয়ে লকার খুলে চিঠির গোছা হাতে নিয়ে বসে থাকতাম। খুলে খুলে পড়তাম। লোহার দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ আসতো, ম্যাম, দেরী হবে আপনার? না না। এই তো হয়ে গেছে বলে ঝটপট আবার সব বাক্সবন্দী করে চোখ মুছে হাসিমুখে বেরিয়ে আসতাম লকার রুম থেকে।

কানে বাজতো গুন গুনিয়ে -
তেরে খুশবু মে বসা খত ম্যায় জ্বালাউ ক্যায়সে
তেরে হাথো সে লিখা খত ম্যায় জ্বালাউ ক্যায়সে ...

সে কবেকার কথা? মনেও পড়ে না। বহুকাল পরে আজ আবার সেই চিঠির গোছা আমার হাতে। কিন্তু কি আশ্চর্য রকমের নিরাসক্ত আমি। এই চিঠির গোছা আজ আমার চোখে জল এনে দেয় না। নিজের মনেই হেসে ফেলি আমি, কী ভীষণ বোকা আমি! গয়নার বক্সের সবচেয়ে গোপনতম স্থানে আমি চিঠি রেখে দিয়েছিলাম! নিজেকেই প্রশ্ন করি, এই যে চিঠির প্রতি সেই টানটা আর রইল না, তার মানে কী মিথ্যে ছিল সেই অনুভুতি? সেই গোপনীয়তার প্রয়োজন আজ এমন করে ফুরিয়ে গেল কিভাবে?

নাকি আমিই বদলে গেছি? সেদিনকার সেই আমাতে আর আজকের আমাতে কত তফাৎ? এক সময় যা ছিল রাত্রি-দিনের ভাবনা আজ সেসব সত্যি বলতে কী, সব সময় মনেও পড়েও না। হয়ত
কোনো কোনো অলস দুপুরে কিংবা ঘুম না আসা কোনো একলা রাতে মনে পড়ে , কিন্তু সে নিয়ে কোনো ভাবের উদ্রেক আর হয় না। আমি এক নিরপেক্ষ দর্শক আজ। এই চিঠির গোছার। সেই সময়ের..

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন