শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০১১

বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উপস্থাপিত যুক্তি-প্রমাণ!

বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উপস্থাপিত যুক্তি-প্রমাণ!  টিউন করেছেন : এস. এম. রায়হান |

 একটি তত্ত্ব সম্পর্কে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে সেই তত্ত্বের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ দেখতে হয়। অন্যথায় ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই লেখাতে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা-বাঘা অধ্যাপকদের মধ্যে অন্যতম অক্সফোর্ড প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স এবং শিকাগো প্রফেসর জেরী কয়েন এর যুক্তি-প্রমাণ হাজির করা হয়েছে। প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স “The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution” শিরোনামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে ‘Massive evidence’ উপস্থাপন করার দাবি করা হয়েছে। প্রফেসর ডকিন্স কী ধরণের ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করেছেন এবং সেগুলোকে আদৌ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলা যাবে কিনা – তা নিজেরাই দেখুন। শুরুটা লক্ষণীয়, যেখানে বিবর্তনবাদকে কৌশলে হলোকাস্ট এর সাথে তুলনা করা হয়েছে! এবার ডারউইনবাদী মোল্লাদের প্রচারিত ‘বিজ্ঞান’ এর ঠ্যালা সামলান!  আট পর্বের মধ্যে প্রথম সাড়ে তিন পর্বে লেকচার আছে  ‘Massive evidence’ দেখলেন তো! এবার শিকাগো প্রফেসর জেরী কয়েন-এর উপস্থাপিত যুক্তি-প্রমাণ দেখুন। প্রফেসর কয়েন “Why Evolution is True” শিরোনামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে প্রফেসর ডকিন্সের বই থেকে প্রমাণ সহ তাঁর নিজস্ব প্রমাণ উপস্থাপন করার দাবি করা হয়েছে। তার মানে প্রফেসর কয়েন এর বইটিকে এ যাবৎকাল বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। প্রফেসর কয়েন কেমন ‘যুক্তি-প্রমাণ’ উপস্থাপন করেছেন এবং সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি-প্রমাণ বলা যাবে কিনা – তাও দেখুন। এই লিঙ্ক থেকে প্রফেসর কয়েন এর বইয়ের রিভিউটাও দেখা যেতে পারে।  পাশাপাশি বিজ্ঞানের নামে ডারউইনবাদী মোল্লাদের উদ্দেশ্যও লক্ষণীয় - স্রষ্টা ও ধর্মের বিপরীতে নাস্তিকতা প্রচার। দেখবেন যে প্রতি মুহূর্তে বিবর্তনবাদে সংশয়বাদীদের উপর মনস্তাত্বিক চাপ প্রয়োগ থেকে শুরু করে যারা বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনীতে বিশ্বাস করে না তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেয় করা হচ্ছে। এমনকি ডেমোগ্রাফি নিয়েও তারা বেশ চিন্তিত। এই নাকি তাদের বিজ্ঞান! বাংলা ডারউইনবাদীরা কিন্তু সাদা চামড়ার কিছু ডারউইনবাদী নাস্তিকদের লেখাকেই কোনরকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়া বিজ্ঞানের নামে চালিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক, ইত্যাদি হিসেবে দেখিয়ে একদিকে ইসলামকে ‘ভুল-মিথ্যা-অসার-ইত্যাদি’ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে আবার মুসলিমদেরকে ‘বিজ্ঞান-বিরোধী, মৌলবাদী, অজ্ঞ, ধর্মান্ধ, ইত্যাদি’ হিসেবে দেখিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও হেয় করা হচ্ছে। অসচেতন লোকজন হয়ত ভাবছেন তারা বিজ্ঞান প্রচার করছে!  প্রফেসর জেরী কয়েন এর লেকচারে লক্ষণীয় দুটি বিষয়: দেখতে হবে উনার লেকচারের মধ্যে নতুন কিছু আছে কিনা; উনি যা বলেছেন সেগুলোকে বিবর্তনবাদের পক্ষে সিদ্ধান্তমূলক প্রমাণ (Conclusive evidence) বলা যেতে পারে কিনা। সংক্ষেপে ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া-সদৃশ একটি জীব থেকে উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মনুষ্য প্রজাতি সহ পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়েছে এবং এই বিবর্তনে স্রষ্টার কোন ভূমিকা নেই। বিবর্তনবাদ তত্ত্ব এবং অক্সফোর্ড প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্সের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের পূর্বপুরুষ এক সময় কলাও ছিল – থাকতেই হবে! কলা থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে রিচার্ড ডকিন্সের মতো মানুষ হয়েছে!  প্রফেসর জেরী কয়েন এর লেকচার

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১১

শুভ জন্মদিন




 তোমার জন্মদিনে আমার উপহার


হৃদয়ের কুয়াকাটা জুড়ে পৃথিবীর সূর্যোদয় শুরু হয়।
ভাসমান পৃথিবীর বুকে লিখে যাই ভালোবাসি।
স্মৃতির প্রাচীন মদ নিজগুনে ভালোবাসা ভুলে থাকে তাই
মন ও দেহের সহবাসে জন্ম নেয় প্রেমের প্রগতী।
তিনভাগ জলের শরীর জুড়ে ধাবমান
প্রেমের তরণী ভেসে চলে। আমি একভাগ
স্থলঘুম থেকে তোমাকে নির্মাণ করি।
আর তুমি হিমালয় দুহিতার কাছে খুলে দাও জলের আরতী।

লাল সিগন্যালের গোপন ইশারায়
এম্বুলেন্সে দ্রুত বিদায় নিচ্ছে সময়
আমি পরজীবী কুয়াশার ভেতর
দিধাদন্ধের অন্তর আত্মায় টলতে থাকি
ভূগোলের সমগ্রতা জুড়ে।

প্রথম জন্মে দেখেছি হাওয়ার দুপুর উড়ে যাচ্ছে পালে পালে।
হাজার বছরের ক্ষত নিয়ে রাতের হৃদপিন্ড জুড়ে বেরিয়ে আসছে আনকোরা অসুখের ফুল।
আর আমি উড়ে গেলে নাকি মানুষ আশ্চর্য হবে
দূত মানুষের স্বপ্নেরা বদলে যাবে।

শুনেছি আমলা আর নিশাচর প্রাণীরা
দিনের আলোকে ভালোবাসে না
অসহায় ও চালাকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে সময়ের গতি।
আর আমি বিচ্ছেদের পবিত্রতা ভুলে
ভালোবাসা ছাড়া আমার অজানা কোন ভাষা নেই।
উদাস বেদনা ভুলে উড়ে যেতে চাই
হাওয়ার দুপুর কেটে ব্ল্যাকহোলে। অনন্ত কোঠরে।

প্রাচীন দিনের প্রাচীর ভেঙ্গে
বেদনার লালমাই বুকে ভেসে উঠে পৃথিবীর স্তন।
তুমি দার্জিলিং রাণী হয়ে অজানা প্রবাসী হও।

আমি পৃথিবীর মাইল মাইল আপেক্ষিক
সীমানার দাগ ভুলে মানুষের পৃথিবীকে ভালবাসি
বলেই জন্ম দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করি
আর অজ্বলন্ত দহনে পুড়ে দেই অজস্র ধারার অভিমান।

সোমবার, ২৩ মে, ২০১১

এক আকাশ বেলুন ওড়াই

এক আকাশ বেলুন ওড়াই

ভালোবাসা এক কোমল কবুতর
সে কবুতরের ডানায় চেপে
আমরা মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে উড়ে যাই, আমরা
ভালোবাসতে শিখি-
ভালোবাসা এক অনি:শেষ নদী
অনুভবের নৌকোয় চড়ে ঢেউ ছুঁয়ে
আমরা ডুবে আর ভেসে যাই, আমরা
ভালোবাসতে শিখি-
ভালোবাসা এক অন্যরকম উপলব্ধির
নাম, যে উপলব্ধি শিশিরের মত
সজীব ; এসো, শব্দবন্ধে সাজানো ভালোবাসা বকুল
কুড়ানোর মত করে তুলে নেই ওষ্ঠপুটে।
পবিত্রতম কবিতার নাম ভালোবাসা
এসো ভালোবাসার নামে
এক আকাশ বেলুন ওড়াই!

নৈর্ব্যক্তিক সময়ের শব্দ

নৈর্ব্যক্তিক সময়ের শব্দ

কয়েকটা টেলিফোন বেজে উঠেছিল কোথাও
আর, রাতজাগা ঘুমেদের আস্ফালনে চাপা পড়ছিলো
বিবিধ আগুনের তাপ
ত্রিধাবিভক্ত জিহ্বা নিয়ে উল্লসিত সাধুগোত্র
অন্যের রক্তে পানপাত্র ভরে নিচ্ছে অবিরাম
পাথর চোখের কার্নিশে ঘর বাঁধা প্রজাপতি, তোমরা উড়ে চলে যাও
এখানে স্বপ্নের বলি দেয়া হবে কিছুক্ষণ পর
বেজে উঠবে বিকলাঙ্গ নর্তকীর কাঁচের চুড়ি
হাড়ের গভীরে হেঁটে যাওয়া ঘুন পোকা, তুমি কেঁদে উঠোনা
এখনি প্রস্তুত করা হবে রাজকীয় সিংহাসন
অভিষেক হবে ক্লীব জনকের যৌনাচার
কর্মীরা ফিরে চলে গেছে মেঠোপথ অসমাপ্ত রেখে
দায়ভার... একা, অবিরাম সময়ের ।

নিঃশব্দের গল্প শেখাও

ঘুমোতে যাবার আগে কিছু বলে নিতে হয় স্বপ্নের কাছে
যেনো দোষে কিছু ফুটে না ওঠে ঠোটে;
কিছু যেনো ডুবে না যায় যাযাবর লোভে।
বালিশ কম্বলের কাছে ওয়াদা করে নিতে হবে
সব কথা বলা যাবে শ্রুতি ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে
ঘরের জানলাগুলো জানাবে দিগন্তের খবর।
অবাক করার মতো কোনো বাকদেবী দাওয়াত পাবে না
যারা এসো নগ্ন হয়ে
যদি পারো-
মাছের স্বভাব দেখাও
গল্পের উঠানে ঝাপ দিয়ে নিঃশব্দের গল্প শেখাও।

অনেক কিছু

 

রোদ-নাট্যম

আজ রোদের বুকে ঝাঁপ দেব
নিজেই নিজেকে শাপ দেব
পুড়ে যাক যাক
খাক হয়ে যাক
মাটির দেহে চৌচির চির
ইঞ্চি ইঞ্চি মাপ নেব
হাপর শ্বাসে দমে দমে
পোড়া মাটির ভাপ নেব
ধূসর চোখে ঠুলি মেরে
খুলির ভেতর ধূলি ঝড়ে
আলগা বাতাস হলকা হলে
মগ্ন ধ্যানে তাপ নেব
রোদের সাথে যুক্তি করে
কারাগারে মুক্তি পুড়ে
ভাগাভাগি পাপ নেব
খান্নাসের বিলোপ হলে
সন্তাপ আর বিলাপ ফেলে
নিংড়ে নিয়ে সূর্য ছটা
সূর্য স্নানের আলাপ হব
রোদের ভেতর ঝাঁপ দেব
রোদের বুকেই ঝাঁপ দেব
***
২৪শে এপ্রিল ২০১১/২৫শে এপ্রিল ২০১১

এই ভোরের প্রতীক্ষায় থাকি

মৃত্যুর পরেও কারো কারো চোখ খোলা থাকে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে আরো অতিরিক্ত কিছুটা সময় দেখে নেবার জন্য।
ভোরের আকাশের আয়নায় চোখ রাখতেই মন ভাল হয়ে গেল।বিগত ঘুমহীন রাতের যন্ত্রণা,কালো কালো ছায়াগুলো অথবা পাঁজর বিদীর্ণ করা ছুরিকার দগদগে ক্ষতগুলোর কথা একবারও মনে পড়লনা।আমি বরং দেখি কি উন্মাতাল উল্লাসে ঘাসের উপর উড়ে বেড়ায় কমলা রঙ প্রজাপতি। কি গভীর অভিনিবেশে লাল কলাবতীর ঝাড়ে , সবুজ ঘাসের বুকে মেখে দেয় প্রেমের পরাগ।ডানায় সাদা-কালোর মিশেলে অপূর্ব ছবি এঁকে নিয়ে গাছের ডাল থেকে ডালে কখনো শ্যামল ঘাসের চাদরে নেমে আসে দু'টো দুরন্ত পাখী।চঞ্চল-বিহঙ্গ কি নাম তোমার? আমার বন্ধু হবে? প্রতিটি সকালের বারান্দায় আমি ছড়িয়ে দেবো ভালবাসার শস্যকণা।।অপার মুগ্ধতায় চেয়ে চেয়ে দেখবো দানা খুঁটে খুঁটে তোলার টুকটুকে আনন্দটুকু।

পৌণপুণিক গন্তব্যের অপেক্ষা

সশব্দ সন্ধ্যা নেমে আসে নাগরিক রাজপথে।
কালো ধোঁয়া, সাদা ধোঁয়া
উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে গুমোট চারদিক।
ঘাম জড়ানো জুলফি আর কপালে
চটচটে ধুলো।
কর্মক্লান্ত শরীর মনের আবর্জনায়
সহযাত্রীদের জড়িয়ে নেবার প্রচেষ্টায় ব্যাস্ত সকলে।
অন্যের ঘামে ঘাম ছুঁইয়ে বসে থাকা মানুষগুলোর
মৃতপ্রায় চোখ থেকে স্বপ্ন ছুটি নিয়ে চলে গেছে বহুদুরে।
অপেক্ষা তাই পৌণপুণিক গন্তব্যে পৌছোনোর।
____________________________________
dM
MMr
4MMML .
MMMMM. xf
. "M6MMM .MM-
Mh.. +MM5MMM .MMMM
.MMM. .MMMMML. MMMMMh
)MMMh. MM5MMM MMMMMMM
3MMMMx. 'MMM3MMf xnMMMMMM"

কোথা যাই, কেনই বা যাই?

কোথা যাই, কেনই বা যাই?
ধুর ছাই, মন বসে না শিল্পকলায়
ভোগ-রোগ, হা হা বেশ জমেছে ...
অন্যজনে বিলাই আলো, আমার ঘরেই শিখা নাই
সুখী সেজে ধোকা পাকাই
নিজেই নিজের কানটা মলে
ছি ছি আর যাবো না ঢলের জলে
তো করছিটা কি? লম্ফ-ঝম্প! গোপনে আছে হৃদকম্প
করবি কি আর সেইটা গেলে?
তবু ভেসেই আছি বানের জলে ...
বেশতো ভালো ঘুমিয়ে থাকা, গায়ে ঘামের গন্ধ মাখা
ভাবি আমার বুদ্ধি পাকা
হি, হি, বুঝ~ এমন হদ্দ আর কোথাও নাই

নুরুলদ্দি - এক জটিল শিল্পীর কাব্য

তবু নুরুলদ্দি মিয়া মালপাড়ার ক্ষুদ্র কৃষক
নিজের সন্তানকে বিক্রি করেন দু-চার টাকায়।
নুরুলদ্দি একজন স্রষ্টা, নুরুলদ্দি একই সাথে সৃষ্টি করে শষ্য ও সন্তান
নুরুলদ্দি একজন যোদ্ধা,
নুরুলদ্দি একই সাথে যুদ্ধ করে অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে।
নুরুলদ্দি একজন শিল্পী,
নুরুলদ্দি একজন মহৎ, উদার এবং জটিল শিল্পী
তবু নুরুলদ্দি,
নিজের সন্তানকে বিক্রি করেন দু-চার টাকায়।
নুরুলদ্দির ক্ষেত ভরা সবুজ শিল্প, নুরুলদ্দি শ্রম এবং ঘাম
প্রতিজ্ঞা ও সৃষ্টিময়তা
মেধা ও সংকল্প দিয়ে তিলে তিলে
সৃষ্টি করেন সেই শিল্প।
নুরুলদ্দি একজন মহৎ, উদার ও জটিল শিল্পী।
তবু নুরুলদ্দি,
নিজের সন্তানকে বিক্রি করেন দু-চার টাকায়।
যদি সূর্যটা অকালে গেয়ে উঠতোনা শত্রু সঙ্গীত
যদি ঝড়টা লম্পট মাতালের মতো ছুটে আসতোনা এইদিকে
যদি নোংরা ঐ কীটগুলো অনর্থক কাটতোনা তৃপ্তির জাবর
তাহলে হয়তো যোদ্ধা নুরুলদ্দি

আরো বড়, আরো ব্যাপক কিছু

এবং....সামনে স্বপ্নীল জীবন্ত পথ, ওপরে দূরবর্তী
ভাস্কর্যের মতো ঝুঁকে আছে প্রবীণ আকাশ, পঞ্জরসার রোদের দিগন্তপ্লাবী বন্যায় উন্নাসিক জ্যোছনার মতো ফুটে আছে ছায়া ছায়া ফুল...
নচিকেতার সামনে হয়তো জীবন, হয়তো মৃত্যু।
সামনে ঐন্দ্রজালিক তাপতরঙ্গ।
ইন্দ্রনীল পর্বতের কোল ঘেষে দাঁড়ানো পনডারেসা, পাইন-
য়্যুক্যালিপটাস আর অলৌকিক মহাভারত নারী...
নচিকেতা বিমুঢ়...শতধাবিভক্ত...
এটাই জীবন!
’’না, তমসা ঘাড় নেড়ে বলে, এটা নয়-আরো বড়...আরো ব্যাপক কিছু!’’
পেছনে প্রাচীন পুরুষ...সামনে সাগর, প্রচন্ড চাবুক হাতে মাতাল বাতাস, অতি দ্বিধান্বিত, অতি অলৌকিক, অতি আটপৌরে।
আকাশের ইন্দ্রনীল ঠোঁটে ঘনিষ্ঠ ঈগল পারদর্শী পাখা মেলছে-
তার প্রলম্বিত মেধাবী প্রচ্ছায়া গাঢ় স্বপ্নের মতো জেঁকে আছে স্বপ্ননিষ্ঠ সফেন ঢেউ এর মাথায়
এটাই জীবন!
’’না, তমসা ঘাড় নেড়ে বলে, এটা নয়-আরো বড়...আরো ব্যাপক কিছু!’’

অধরের স্বাদ ভুলে গেছি

অধরের স্বাদ ভুলে গেছি,
জেলখানার কয়েদি জানালার ফাঁকে দেখে
একফালি খোলা আকাশ
তোমার ছবি দু'চোখের আয়না থেকে বুকে নামে যেই
কি যে ভয়ংকর গুরু গুরু প্রকাশ!
এই বুঝি মেঘ নামলো -
এটা মুছি, সেটা গুঁজি
তারপর বুঝে যাই
অধরের স্বাদ ভুলে গেছি।
টুনটুনির চঞ্চলতায় ধরেছিলাম তোমার আঙ্গুল,
সে হাতেই খুঁজে এনেছো তুমি
স্থিরতার আশ্চর্য পরিবেশ অনুকূল;
এখনো স্মৃতির কাছে যতবার যাই
আমার কপালে তোমার শেষ চুম্বন
কি করে এই মুখে করি গুঞ্জন
তোমার স্বাদ ভুলে গেছি, ছাই!

গোলাপবালা....


জানো তো, ভালোবাসা কেমন?
আমার হাতের এই গোলাপবালাটার মতোন
চিরযৌবনা, যুগে যুগে বারে বারে ফিরে আসে
সেই একই রূপ নিয়ে, একই আবেদন নিয়ে...
চিরসুন্দরী...
মা'র যুগেও যা, মেয়ের যুগেও তা....
রঙীন... জ্বলজ্বলে...দগদগে...
গোলাপবালা'র সৌন্দর্য্য পুরনো হয়না....
ভালোবাসারও...... ।।
মাঝে মাঝে শুধু সাদা-কালোয় হারিয়ে যায়
রক্ত লাল ভালোবাসা....
--
শিরোনামহীন/ পুত্তলিকা/ পুতুল

মুক্তগদ্যঃ- বৃষ্টি ও চিঠি বিষয়ক

*
আমি এখন আর কারো কাছে থেকে চিঠি পাই না। সেই অর্থে কারো চিঠির জন্য যে উদগ্র প্রতীক্ষা, সেরকম কেউ আসলে কোনদিনই ছিলোনা। পাতাবাহারের সবুজে ছড়ানো ছিটোনো বিবিধ রঙের মত আনন্দ নিয়ে আসা বর্নিল চিঠি বন্ধ হ'য়ে গিয়েছে এক যুগ আগেই। তবু, বৃষ্টি যখনই নামে; হোক সে মাঝ দুপুরে, হোক ভোর সকালে কিংবা নিওন সন্ধ্যায় নাহয় নিশুতি রাতে। আমার খালি মনে হয় একজন পোস্টম্যান, তার বুড়োটে সাইকেলে চেপে ভিজতে ভিজতে আমার জন্য একটা চিঠি বয়ে আনছে। সারাটা বৃষ্টিক্ষণ আমি অপেক্ষায় থাকি কলবেল বেজে ওঠার...
**
রোদ ঝলমল দুপুরের একটা উদাসী মাদকতা আছে। তার সাথে যদি যোগ দেয় মফস্বলের একাকী রাস্তা আর রাস্তায় এলোমেলো ছড়ানো ছায়ারা... সেই দুপুরের উদাসী মাদকতায় আমি মরতে পারি।
এমনই এক দুপুরে, সাইকেলে টুনটুন ঘণ্টি বাজিয়ে খাকি জামার পোস্টম্যান একটা চিঠি এনেছিলো আমার জন্য।
***

বিস্মৃতি

আমি জানি ভুলতে চেয়েও তুমি কিছুতেই ভুলতে পারবেনা আমাকে।
কেবলই এক মানুষই তো তুমি-কেবলই এক পুরুষইতো! ভুলতে চেয়েও কিছুতেই ভুলতে পারবেনা আমায়। যদি কিশোরবেলার থেকে তোমার বিস্মৃতিচর্চার হিমেল আঙ্গুল এই ম্লান সূর্যাস্তকাল ছুঁয়ে দিতে পারতো, তবে হয়তো আমাকে ভুলতে পারতে তুমি। এখন আর পারবেনা।
আমি জানি, ভুলতে চেয়েও তুমি কিছুতেই ভুলতে পারবেনা আমাকে। যতক্ষণ আমি অর্পন করি আমার অচেনা পরিচয় তোমার চেনা গন্ডির সীমানায় ততক্ষণ বীপ্সার হলুদ হাঙ্গর তোমার ভেতরটাকে ঠুকরে ঠুকরে খাবে - আমাকে ভুলতেই পারবেনা তুমি।

এপিটাপ আমার জন্যে তোমার আঙ্গুল

মামারা চাঁদ নামালো জলে;
আমরাও শরীর ডুবালাম কিছুটা।
চতুর্ভুজ কলার মধ্যে রজনী
উপরে ছোকলা আছে, পিছলে যাবে!
সাবধানি সাধু ধুপ কাঠি জ্বালে
কলমের আগায় নাচে চিত্ত চারবাক।
অঙ্গ যায় ভাসিতে গঙ্গার নাম জপে
জীবের সাথে বোনের বাসায় নিদ্রাকাল!
নারায়ন তকদিরে হয় তেপান্তর
বাসনা সাঙ্গ হলে আর আসব না!
কলিতে ফুটুক যতো বেজন্মা ঘাস
ঘুমুতে যাবার ফলে ফলেছে মাস।
ফড়িং - এ হাওয়া বাজায় নিখুঁত সুরে
দেখে হাত বদল করি গাছের ওজন।
স্বজনের বিয়োগ ব্যাথায় কাঁথা খুঁজি
এপিটাপ আমার জন্যে তোমার আঙ্গুল।
বরাবর পাল্টে গেলো বিষন্ন ভুল, ভীষন ব্যাকুল।

ভিন্নধর্মী লাইভ প্রোগ্রামে স্বাগতম

অনেক পরিশ্রম করে একটা লাইভ প্রোগামের সেট তৈরী করেছি।
বিশ বাই বিশের একটা ঘর, মৃদু নীলচে আলোয় আলোকিত
ধবধবে সাদা একটা বিছানা ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই
বিছানার উপর, পাখির পালক ভরা নরোম দু'টো বালিশ
মেঝেতে তিন গ্লাস বরফ শীতল পানি, দু'টো সিগারেট আর একটা লাইটার
ঘরের এক কোনে থাকা স্পিকার থেকে মোলায়েম ভেসে আসছে চৌরাসিয়ার বাঁশির সুর।
"ঘুম"
ভিন্নধর্মী কিন্তু সর্বাধিক সম্প্রচারিত লাইভ প্রোগ্রামে আপনাদের স্বাগতম।

কবিতা: প্রার্থনা তোমার হারিয়ে যায় অন্ধকারে

সে যাই হোক, এখনকার সিচুয়েশন ডিমান্ড করতেসে, ঘাসফুলটার ভেতর থেকে একটা ভয়াল অজগর সাপ বেরিয়ে আসুক। ওটার চাপায় গেঁথে থাকা ধারালো দাঁত দু'টোও বের হয়ে আসুক। এসে গ্রাস করে নিক তার নিজের লেজটাকেই। কিন্তু তেমনটি ঘটছে না। এই না ঘটাটা শুভলক্ষণ নয়।
রঞ্জন সেদিন সন্ধ্যায় গার্মেন্টসের ভেতরেই আল্পনাকে জাপটে ধরেছিলো। তাদের দু'জনের শরীরে বা মনে কোথাও মাধুর্য নেই। ওদের জাপটা-জাপটিতেও ছিলো না। দেহভরা কাম হঠাৎ কুল-কিনারা ভাসিয়ে বইতে শুরু করেছিলো। কেউ দেখে নি।
হরতালে প্রথম নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলো তিন বছরের মাথায়। উত্তালতাও ইদানীং নতুন মাত্রা পেয়েছে। একদল লোক হিংস্র পশুর মতো রামদা' আর লাঠি হাতে রাস্তায় নামে লুটপাট করতে। কুপিয়ে মানুষ মারতে। আরেকদল নামে বন্দুক হাতে। তাদের পরনে থাকে উর্দি। কিন্তু মননে থাকে জিঘাংসা। কোনো পিকেটিং হয় না। তবু পুলিশের গুলিতে সেই পশুদের একজন মারা যায়। মরেই শহীদ বনে যায়।

মুগ্ধ হাতপাখা

-আবু মকসুদ
গেরুয়া শহরের জমকালো রাত্রিগুলো
ঘোড়ার খুরের আওয়াজে
বিছানায় এলিয়ে পড়ে জীবনের অপূর্ণ ভাণ্ডার
সমুদ্র স্নানে গিয়ে বালির জানুতে
লুকিয়ে ছিলাম মাটির প্রদীপ,
হাত পা গুটানো সময়ে ফের ফিরে এসেছিল চুম্বন স্মৃতি
বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক আগুনের হল্কা ছুটায়
যৌথ বাগানের ফুলে ওড়ে কীট, আর
স্মৃতির প্রতিমা হয়ে কাঁদে একদার মুগ্ধ হাতপাখা।
ধুসর বৈধব্য সাজ, বিপরীত মুখী
হাওয়ায় নিভে যায় শেষ মোমবাতি
নদীর ওপাড়ে পোড়ে এক জীবনের দুটি চিতা।

তাস অথবা বাতাস

তাস অথবা বাতাস-
এর মধ্যে হাওয়া এসে উল্টিয়ে দিলো
হুলের মতো স্থুলো সহবাস।
প্রতিবেশি মন শান্ত হলে উচ্চতা বেড়ে
ওঠে ঢেউ;মাছের পোনা না কি ফনা এসে চুমু খেয়ে গেল,
এরই নাম বুঝি বেজন্মা সুনামি!
হার্বার বারবার জল এসে
তুলে ধরে সাঁকোর প্রয়োজন;
তবু তুমি কাছে এসো সই,ধ্বংসাবস্থার আয়োজন।
যদি এসে দেখ খাল বিল বাউলের ঝোলায় ভর্তি তামাক বৃক্ষের বীজ
জগতের সকল শঙ্কার জন্ম হয়ে গেছে তখন;
ভেঙ্গে যাওয়া খোলের হাহাকার;
তুলে নেবে বিধবা বিশ্বের শেষ প্রণয় অধিকার।

অসমাপ্ত প্রেম কাহী্নি (শেষ থেকে শুরু)

(দুই)
কেন??
আমি তোমায় করি আপন,
আর তুমি কর পর।
আমি টানি কাছে,
আর তুমি যাও দূরে।
আমি গরি,
আর তুমি ভাঙো
আমি সাজাই,
আর তুমি কর এলোমেলো।
আমি বাধি,
আর তুমি ছিড়ো
আমি তোমার সব সহ্য করি,
আর তুমি কর না।
আমি সব মানি,
আর তুমি মানো না।
আমি তোমায় খুজে মরি,
আর তুমি যাও লুকিয়ে।
আমি ভাবি তোমায় নিয়ে,
আর তুমি ভাবো অন্যকে।
আমি করি কান্না,

"যাত্রা "

অদ্ভূত সব বর্ণিল বিস্মৃতি..
স্মৃতির বিষন্ন কারাগারে,
আধখানা সুখের আধময়লা অনুভুতি..
আর নির্মম বাস্তব ;
চেনা পথজুড়ে অচেনা ঝাপসা চোখ
কলের গাড়ির তীক্ষ্ণ হুইসেল ..
পুরনো আকাশ , পুরনো মেঘ ..
একলা রাত্তিরে বর্ণিল আকাশে
একলা তারা গোনা প্রহর..
হাতে পুরনো কাব্য ,উপন্যাস ...
কিংবা খবরের কাগজের
প্রথম পাতা ,
আধো ঘুম আর জেগে থাকার মাঝে
পুরনো শৈশবে হেঁটে যাওয়া ,
কোনো পুরনো স্মৃতি ...
রোমন্থন করে
আনমনে হেসে ওঠা ,
বিস্তীর্ণ জনসমুদ্র পিছে পড়ে...
পড়ে থাকুক নদী - পাহাড় আর
কষ্টময় বর্তমান ..
কতদিন পর
শিকল ভেঙে,
আজ মুক্ত হলাম পাখির মত ..
ভাসলাম সাদা মেঘের ভেলায়..
ধুলোমাখা রাজপথ..
অস্থির কোলাহল.. আর ..
কলের আওয়াজ আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে..
রং ভরা কিছু অতীতকে মুঠোয় পুরে...
একরাশ স্বপ্নকে সঙ্গী বানিয়ে ...
আজ আবার পথিক হলাম..
আমি চললাম..
এই আমার একলা পথ ,

দায়হীন বন্ধুতা

রোদ্দূর জল কাদা মাখা
তোমার হাত আমাদের আনন্দ মেহেদী রাঙা,
অবাক বালিকার বাউল-দেউল হওয়া -
রুদ্ধ করলে যখন,
অভিমানের প্রতি স্তর গলতে লাগলো
স্নেহে পূর্ণ করলে জখম।
ব্রীড়ায়-আড্ডায়-ক্ষোভে, লাজে কার্তুজ আগুনে
প্রশ্ন করেছি যতবার, বলেছো এ প্রেম নয়-
তোমার একান্ত প্রকাশ হয়তো বা ভালোবাসার;
অমীমাংসিত বাস্তবে,
আকাশ পেরোনো স্বপ্নের সীমায়
জেনেছি প্রথমত-শেষ পযর্ন্ত আমরা "বন্ধু"
যেখানে নেই আর কোন দায়।
কবিতা লিখার পর বলে আমার লিখার দৈর্ঘ্য খুবই কম, নূনতম ৫০ শব্দ লাগবে । কি করি এখন??
এটা কেমন বিচার?? তাহলে হেলাল হাফিজের "পারমাণবিক বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না" এই লিখা তো আমরাবন্ধু তে জীবনেও পোস্ট হতো না

কষ্ট

ভাবছিলাম লিখব না। কিন্তু মনটা অনেক খারাপ।লিখে যদি মনটা ভালো হয়...
কষ্ট গুলো আছড়ে পরে বুকের মাঝে রক্তনালী জুড়ে
ছিন্ন করে দিতে চায়ে হিংস্রতার খুন পিয়াসের ছুড়ে
বন্ধ করে দিতে চায়ে জীবন প্রদীপ আশা
যেন মুছে দিয়ে যায়ে জীবনের সকল ভালবাসা
অশ্রু গঙ্গায়ে সিক্ত হয়ে শান্তি পায় নি হৃদয়
আশার ভাঙন সহ্য করতে তাই আরও কিছু অশ্রুর লাগবে সঞ্চয়
রাতের আধার পরে রবে সাথে কষ্টের দিন
স্বপ্ন গুলো মরীচিকায়ে মিলিয়ে কেন হয়ে যায়ে বিলীন?
কষ্টগুলো বাঘের থাবার মতন আছড়ে কেন পড়ে?
শান্তি নামের সুখ পাখিটা কেন বেথার আঘাতে ঝরে?
কেন নেতিয়ে যায়ে জীবনের মধুর স্মৃতি গুলো
জীবন কেন হয়ে উঠে হতাশার ধুলো?
রাতের বেলার শান্ত নির,
কষ্ট গুলো করে ভিড়
আবছা অন্ধকারের রাত জাগা ছায়া
মনের মধ্যে উকি দেয় শুধু জগতের মায়া
অবলীলায়ে ভাবনা আশে কতো কিছু মনে
শুধু আশাটাকে বাঁচাতে চায়ে মনে প্রানে

পিছু টান

দেহ বলে অনেক বড় হয়েছি ,
মন বলে আজও ছোট রয়েছি,
আকাশে চাঁদ উঠলে দেখতে যেতাম ,
বৃষ্টি হলে ভিজতে যেতাম,
পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে যেতাম,
দৌড়ে এসে নদীর বুকে ঝাপ দিতাম,
মাকে না বলেকতবার আম কুরাতে গেছি,
বৃষ্টিতে ভিজে কত বার অসূখ হয়েছি ,
অসূখের ঘোড়ে কত প্রলাপ বকেছি ,
ঘুমের ঘোড়ে কত চমকে উঠেছি ,
মা মা বলে কত কেঁদেছি ,
মায়ের আদরে সব ব্যথা ভূলছি ,
হারিয়ে যায়নি সেই স্মৃতি সব ,
চোখের সামনে আজও হয় উদ্‌ভব ,
সেই কাচালং নদীর পাড় ,
জল স্রোতে ভেঙে যায় যার দুইধার ,
আবার ও ফিরে যেতে চাই সেই পাড়ে ,
শহর ছেড়ে
চলমান ..........

তুমি ভালবেসেছিলে বলেই

তুমি ভালবেসেছিলে বলেই ,
মৃত্যুর উমমাদনাকে পেছনে ফেলে আরেকবার বেঁচে উঠা
পাগলের মতো করে বাচার লড়াই করা...
তুমি ভালবেসেছিলে বলেই ,
আমাকে নিয়ে আমার মেতে থাকা
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমার পথ-পানে চেয়ে থাকা...
তুমি ভালবেসেছিলে বলেই..
লাল শাড়ি লালচুরি পরে মাথায় সিদুরের রেখা টানা...
স্বাধীনতা গুলো জড় করে তোমার সাজানো ঘরের ঘরনী হওয়া..
তুমি ভালবেসেছিলে বলেই ,
তোমার পথের সাথে নিজের পথের ঠীকানা লিখা
পুরানো পথের নাশানা মুছে ফেলা।
তুমি ভালবেসেছিলে বলেই ,
নিজের ভিতরে নিজেকে ভেঙেচুরে
নতুন করে গড়ে তোলা....

অচিন্তন অনুভূতি

এক ধোঁয়াশা সকাল
এক মুঠো রোধ
জলকণার রাশি বয়ে চলেছে নদীর কুল ধরে
এরই মাঝে আছড়ে পড়ছে গাঙচিল
বিচিত্র মানুষের এই জীবন প্রকৃতির লীলাখেলা
কখনও ভেসে যায়ে আপন আনন্দে
কখনও বা কারও জোর করা কিছু পদক্ষেপ
তবুও মানুষ চলছে তার জীবনের অববাহিকায়ে
কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু স্মৃতি কালক্ষেপণ চালাচ্ছে জীবনের এই ধারাতে
নষ্ট করতে চাচ্ছে প্রশান্তির ছায়াকে
কিন্তু সে কি তা আসলেই করতে পারছে?
না মরিচিকার মত দুমড়ে মুচড়ে পড়ছে জীবনের অন্ধকার কুটরিতে?
মাঝে মাঝে সুখের অবসন্নতায়ে মানুষের একি মাখমাখি...!
তার মাঝে কি দুঃখ গুলো তাকে মলিন পরশ বুলাতে চাচ্ছে?
মানুষ কি ভুলে যাচ্ছে জীবনটাকে?
রোবটের তৈরি ইঞ্জিনকে বেছে নিচ্ছে?
না, একটি শুভ্র সকালের প্রতীক্ষায়ে তীর্থের কাকের মত নুড়ি কুরচ্ছে?
সেই সুন্দর সকাল যা মানুষকে এনেদিবে অনাবিল প্রশান্তি
একগুচ্ছ মেঘ আর কিছু শিশির যুক্ত ঘাসের মুক্ত ছড়ান আবেশ

আমার দেশ

নীল সমুদ্রের রং মেখে তাই আকাশ হল নীল
তাকিয়ে দেখ নদীর তালে নাচছে যেন বিল
তাকিয়ে দেখ মাছরাঙ্গাটা মেলছে রঙের পাখা
এসব বলে ,আমার দেশটা ছবির মতন আঁকা।
হরিন দেখ তিড়িং বিরিং লাফিয়ে লাফিয়ে চলে
ময়না যেন কণ্ঠ ছেড়ে দেশের কথা বলে
মাঝি দেখ দাড় বেয়ে গায়, ভাটিয়ালি গান
এসব যেন প্রকাশ করে দেশের জন্য টান।
রোদে পুড়ে কৃষক দেখ কাটছে সোনার ধান
নকশি কাথা গাইছে যেন দেশের জয়গান
বিলের দেখ পানকৌড়ি নাচছে মনের সুখে
দেশের নামটি ভাসছে যেন সবার মুখে মু...
বাদল দিনে আমটি কুড়ে যখন ঘরে আসা
বারান্দা পেতে মায়ের হাতের গরম খিচুরি নিয়ে বসা
সাথে থাকে টিনের চালে রিমঝিমঝিম শব্দ
ঠাণ্ডা হওয়ায়ে আমের চাটনি...আহা !! মনটা করে জব্দ।
রোজ সন্ধ্যায় আসর বসে,গাজির পালা গান
ঘরে ঘরে জাগে যেন আনুন্দেরই বান
আরও আছে সবুজ মাঠ আর শান বাধানো ঘাট
এসব নয়ত রুপকথা, নয় কোন প্রবাদ।
দেশের কথা বলব কি আর, বলব তোমায়ে কিতা

মা

মা...প্রতিটি সকালের সূর্যের হাসি
ভোরের সবুজ ঘাসে শিশিরের রাশি
মা...এক জলক মমতা আর একটু কঠোরতা
মনের মধ্যে নব পুষ্পের আবহগতা
মা...এক মধুর বানি,প্রশান্তির আবেশ
তুমি যাই বল,লাগে বড় বেশ
মা...রুক্ষ চোখে তাকিয়ে বল ,করবি না এটা বাছা
তোমার কঠোরতার মাঝেই মমতার ছায়ায় আমাদের বাঁচা
মা... জীবন তুমি চিন্তে শিখাও জীবনের মত করে
বাঁচতে তুমি শিখাও মোদের মমতার ডরে
মা... ভালবাসতে শিখাও তুমি নিষ্ঠুর জীবনটাকে
মমতা দিয়ে ঢেকে ফেলো সকল বর্বরতাকে
মা...তুমি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া
তুমি না থাকলে হতনা এই জীবনটা পাওয়া
মা..তোমার কথা বলতে গিয়ে শেষ হয় না বলা
শব্দ গুলো একত্র হয়ে গাথে সুরের মালা
মা... তোমার কথা বলে আমি পারবনা করতে শেষ
তুমি মোদের জীবনে সুখের আবেশ
মা...তুমি জীবনের শুরু, জীবন তোমাতে শেষ

আশা

আশা আচ্ছাদিত এক গুচ্ছ কল্পনার রাশি
বারে বারে সেই বিন্দুতেই ফিরে আসি
কতগুলো মুহূর্তের অবণ্টিত শাখা
উরন্ত পাখির আচ্ছাদিত পাখা
ভালো আর মন্দের নাই কোন মত বিরোধ
এ যেন একাকীত্ব মনের কিছু ক্ষোভ
গুঞ্জরিত মনের অপ্রকাশিত বানী
কল্পনার অংকিত ইচ্ছের রানী
আশা সেতো কণ্ঠনালীর অপ্রকাশিত শব্দ
জীবনকে করে এক গণ্ডীর মধ্যে জব্দ
আশা যেন কুলকুল রবে বয়ে যাওয়া এক নদী
মনকে তৃপ্ত করে,বাস্তব হয় যদি
আশা যেন নিঃশেষিত ভালবাসার এক প্রবাহমান ধারা
মন ও কল্পনার মিলনের অলংকিত বারা
আশা সেতো জীবনেরই এক অংশ
আশা সেতো ভালোবাসার বংশ......।

জীবন

জীবন একটি আলংকরিক পাতা
জীবন সেতো হিসেবের খাতা

জীবন একটি সদ্য ফোটা ফুল
জীবন যেন ঘটে যাওয়া ভুল
জীবন সেতো রহসসের জাল
জীবন কতো সৃতির পাল
জীবন যেন আঁকা কোন ছবি
জীবন সেতো জীবনেরই কবি
জীবন তুমি তোমার মত চল
জীবন তুমি কার কথা বল?
জীবন তুমি একি আনুন্দ মহীয়সী
জীবন তুমি রং ধনু্র ঋষি
জীবন ...সেতো আমাদেরই গল্প
জীবন... সেতো সুখের সাথে দুঃখ অল্প
জীবন... কিছু আশার বনবাস
জীবন... সবার সাথে সবার বন্ধুত্তের আভাস......।






জীবন

জীবন একটি আলংকরিক পাতা
জীবন সেতো হিসেবের খাতা
জীবন একটি সদ্য ফোটা ফুল
জীবন যেন ঘটে যাওয়া ভুল
জীবন সেতো রহসসের জাল
জীবন কতো সৃতির পাল
জীবন যেন আঁকা কোন ছবি
জীবন সেতো জীবনেরই কবি
জীবন তুমি তোমার মত চল
জীবন তুমি কার কথা বল?
জীবন তুমি একি আনুন্দ মহীয়সী
জীবন তুমি রং ধনু্র ঋষি
জীবন ...সেতো আমাদেরই গল্প
জীবন... সেতো সুখের সাথে দুঃখ অল্প
জীবন... কিছু আশার বনবাস
জীবন... সবার সাথে সবার বন্ধুত্তের আভাস......।

ইন্টার্ভিউ

এলোমেলো মাথা ঝাঁকড়া চুল
যদি করি একটু ভুল
টেনশন খাচ্ছে কুড়ে কুড়ে
কতো চিন্তা আসছে মাথা জুড়ে
তবু আমি উঠে দাড়াই
ভয়ের পথে পা বাড়াই
যা হবার তাই হবে
সময় হলে দেখা যাবে...
প্রথমে যেতে হবে ফিটফাট করে
দরজাটা একটু শব্দ করে
বলতে হবে ...আসতে পারি স্যার...
ব্যাস ভিতরে ধুকতে পারলেই সব খালাস...
ভাবছি যত সোজা
ভিতরে গেলে যাবে বোঝা
যখন ছুড়বে প্রশ্নের ঝাক
কোথা তখন খুজে পাব বাক.?..
যা হবার তাই হবে
সময় হলে দেখা যাবে
পারিনা তো কিচ্ছু আমি
বাংলাটা শুধু বলতে জানি
যদি বলে ইংরেজি
তখন আমি করব কি?
যা হবার তাই হবে
সময় হলে দেখা যাবে...।
যখন বলবে কাজের কথা
পারি আমি ঘোড়ার মাথা
গাধার মত তাকিয়ে থেকে
বলব আমি একটু বেকে
যা হবার তাই হবে
সময় হলে দেখা যাবে...।
মাথাটা পাতলা করে
ছুটবো এখন নিশানা ধরে
যা হবার তাই হবে...
সময় আমাকে বাঁচিয়ে দিবে...।

অপেক্ষা জাতক

প্রেতমুখ জাগে সন্ধ্যার আকাশে
সাপের খোলস ছাড়ি এইবেলা
ফ্যাকাশে চাঁদ মাথা তুলে
আমার মাংসে হবে নৈশভোজ
সিঁড়িতে শুয়ে মুত্যু ও ভালোবাসা
জানালার ওপারে ছায়াগণিকার মুখ
সাবধানে রাত্রি বেয়ে এসো শীর্ষে
মৃত্যুঞ্জয়ী সূর্যলোকের সাষ্টাঙ্গ আগুনে
বহুদিন পর উল্কাপথ দিয়ে যেতে
মনে পড়ে গেল দুর্বিনীত নীল প্রজাপতিকে
রাতের কমনীয়তায় মুহুর্মুহু রূপ বদলে
পরিণত হত হাড়সর্বস্ব কংকালে
তন্দ্রাঘুমে মুঠোতে ধরা স্বপ্ন
কোঁচড়ে রাখে যে বালিকা
ওর ঠোঁটে লেগে আছে সাপের রক্ত
পোশাকে রাতচিহ্ন, গলায় থাবার দাগ
এসব দেখে কাঁটাঝোপ, নেকড়ে আর আমি
খুব হাসাহাসি করি।
ভুল নয়, বালিতে পায়ের ছাপ
ধী মনের পরিচর্যায় ধীরে নিশ্চিহ্ন
ঝাউবনে পড়ে দীর্ঘ ছায়া
দাঁতে নখ ধার দিয়ে সঞ্চিত বিষে
উদরে পুরবার ভীষণ অপেক্ষা আবার।

হলুদ স্মৃতির জন্ডিস

কলকল জলের তোড়ে
ভাসে একটা দুটো রেখা
সন্ধ্যার রঙ গাঢ় কিশোরীমুখে
ফুটন্ত হলুদ জন্ডিস
জ্বলমান ঠোঁট বলে ‘ব্যথা’।
কোথায় ব্যথা!!!
বরাহ বরাহ বলে ডাকে কেউ
কাঁপন তোলে স্নায়ুতে
নিনাদে অমল সময়;
দগ্ধডানা মেলি সূর্যালোকে
ব্যাধিঘোর কেটে বৃষ্টি নামুক
আড়ালে কুড়াবো স্মৃতিঝিনুক।

রেললাইনে বডি দেবো, মাথা দেবো না

নাহ, অনেক হয়েছে, এইবার আমি সিদ্ধান্তে অটলঃ আগামীকাল থেকে চিনি বন্ধ।

ব্যাপারটা এরকম মোটেই নয় যে আমি খুব মিষ্টি খেতে পছন্দ করি। বরং মিষ্টিজাতীয় যেকোন খাবারে যথেষ্ট অনীহাই রয়েছে। কিন্তু ঝামেলা বাধাচ্ছে একটা খাবার, থুড়ি পানীয়। আর কি...চা নয়ত কফি। চা-কফিতে ব্যাপক আসক্তি আমার, এবং সেটা চিনি সহ। প্রতি কাপে মিনিমাম এক চামচ চিনি খাই। তো দিনে তিন কাপ চা/কফি খেলে একদম ডিরেক্টলি তিন চামচ চিনি পেটে ঢুকে যাচ্ছে। তাইলে আর কেমনে কি? বয়স বাড়ছে, দিনে এক্সারসাইজ বলতে বাড়ি থেকে স্টেশন পর্যন্ত সতেরো মিনিট হাঁটা...আর কিছু না হলেও এই তিন চামচ করে চিনি তো শরীরে জমেই যাচ্ছে। গত আড়াই বছরে দশ কেজি ওজন কি এমনি এমনি বাড়লো? আড়াই বছর মানে ৯১২ দিন, মানে ২৭৩৭ চামচ চিনি!!! আজ রাতে যেহেতু ইতিমধ্যেই চা খেয়ে ফেলেছি, আগামীকাল থেকেই তাহলে শুরু। মরি-বাঁচি, চায়ে অন্তত চিনি খাবো না।

নিঃশব্দে

সংগীর অভাব আমার হয় নি কোনদিনই -
এই যে দেখো
বইয়ের তাকে আর একটুখানি জায়গাও নেই অবশিষ্ট।
গানের জলসায় যাওয়া হয় না আজকাল ঠিকই,
তাই বলে গান শুনি না ভাবো না নিশ্চয়ই!
গানের বাজারজাতকরণ ব্যাপারটা মন্দ নয় কি বল?
যদিও ইদানিং আগের মত
খবরের কাগজে খুঁজি না
আজ কোথায় কখন কোন নাটকের শো চলছে,
অথবা ভালো লাগা মুভির ফেস্টিভাল।
কিন্তু সব আছে ডিভিডি হয়ে,
হাতের কাছেই অন্য সব কিছুর মতই।
আর আছে বিশ্বজোড়া জাল ছড়ানো এক গণকবাক্স।

এত কিছু নিয়ে
কাটানোর মত সময়গুলো
অতিরিক্ত হয়ে যায় নি কখনই তাই আমার জন্য।
বুঝতে পারছো তো?

তোমাকে আজকের ব্যস্ত বিকালটার কথাই বলি নাহয়--
আজ কি হলো জানো?
বিকাল বেলা হঠাত সে কি উত্তাল বাতাস! ঝড় !
আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই
ভীষণ বাতাসে আমার স্কার্টের ঝুল গোল হয়ে ফুলে উঠলো!
ঠিক ছোট্টবেলায় যেমন ঘরের কোনায় দাঁড়াতাম
ফ্যানের বাতাসে ফ্রকের ঝুল ফোলাতে!
আর ঠিক তখনই আমার একটুখানি, হ্যা খুব একটুখানিই
তোমার কথা মনে হলো...
ধানমন্ডি লেকে বেড়াতে গিয়ে একদিন
হঠাত এমনি ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম আমরা,
তোমার মনে পড়ে?
সবাই যখন ছুটোছুটি করে আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত,
তখন তুমি আর আমি হাত ধরে লেকের পাড়ের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে!
আমি সেদিন কেন যেন শাড়ি পড়েছিলাম,
ঝড়ো বাতাসে
পতপত করে উড়ছিলো আমার লাল টুকটুকে শাড়ির আঁচল...।

এই তো, এইসব স্মৃতি রোমন্থনের ব্যস্ততায়ই
কেটে গেলো আমার আজকের বিকেল,
অন্য আর সব দিনের মতই।

এবার বলো তো, তোমাকে ভাবার বিলাস
তবু কেন কাঁদাবে আমায়?
সময় কোথায় আমার তেমন!

কিন্তু কি আশ্চর্য!
প্রতিটা দিনের শেষে কেন যেন রাত নামে।
নামেই,
রোজ।
আর আমার সারাদিনের নিজস্ব সংগীদের
ঠিক সেই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে হয়।
আমার ভীষন ব্যস্ততার আলগা মুখোশ
এক নিমেশে খসে পড়ে।
আমার চিতকার করে বলতে ইচ্ছা করে --
আমার এসব কিচ্ছু চাই না
কিচ্ছু না!

আমার--
শুধু তোমাকে চাই!

চিরন্তন

চিরন্তন

চুলে ইচ্ছামতন তেল দিলাম একটু আগে।

এক সময় চুলে তেল দিতে এত বিরক্ত লাগতো! মামণি জোর করে ধরে চুলে তেল দিয়ে দিত, দেয়া শেষে তেলমাখা হাত কপালে আর গলায় ঘষে দিতো। আমি রাগে-বিরক্তিতে চিৎকার উঠতাম আর আম্মু বলতো, "আরে বুঝবি না, এত পড়াশুনা করিস, আরাম লাগবে দেখিস"। আমি প্রাণপণে ঘষে কপাল আর ঘাড়ের তেল তোলার চেষ্টা করতাম আর ভাবতাম, চুলে দিয়েছে দিক, কপাল-ঘাড়ের ব্যাপারটা কি?! বলা বাহুল্য, পরদিন চুলের শ্যাম্পুটাও আম্মুই করে দিতো।


এখন আর এই সবের বালাই নেই। সেই স্বার্থহীন ভালোবাসা, শত মুখঝামটা সহ্য করেও কেবল মঙ্গলই চেয়ে যাওয়া... সেই সব রূপকথার মত স্মৃতি হয়ে গেছে সব। এখন শুধু এতটা বয়সে আম্মুর সেই সব বিরক্তিকর আদর, ভালোবাসা আর যত্নের জন্য মাঝে মাঝে নিজেকে এত বেশি কাঙাল মনে হয়! একটাবার, কোনভাবে, যেকোনভাবে যদি তার কাছে যেতে পারতাম... যত দূর হোক, শুধু যদি সেটা হতো এই পৃথিবীর কোন একটা জায়গা, আমি গিয়ে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকতাম। মাগো, কত খারাপ ব্যবহার যে করেছি, কত মুখে মুখে তর্ক, বেয়াদবী, তোমার আদরের মূল্যটুকুই দিই নি কখনও। আর ক'টা দিন সময় দিতে মা, আরেকটু বড় হতাম, আরেকটু বুঝতে শিখতাম... আর যদি জানতাম তুমি এমনি করে চলে যাবে... বড় কষ্ট মামণি বুকের ভেতরে, বড় ফাঁকা- প্রতিটা মুহুর্তে, প্রতিটা ছোট ছোট ঘটনায়, শুধুই তোমার কথা মনে পড়ে...

আজ চুলে তেল দিয়ে কপালে আর ঘাড়েও মেখে দিয়েছি। তুমি কি দেখে একটু খুশি হলে? তোমার মেয়েটার একটুখানি আরাম হলো!

রবিবার, ২২ মে, ২০১১

চিঠি


ব্যাঙ্কের লকারে রাখা বড় গয়নার বাক্‌সোটা সব সময় খোলা হয় না।
তিন তাকের এই গয়নার বক্স যদিও বা মাঝে সাঝে খুলি ওর নিচের তাক অব্দি যাই না অনেককাল। কারণ আমি জানি, ঐ নিচের তাকে কোন গয়না রাখা নেই। আছে কিছু চিঠি। প্রেমপত্র বলাই ভাল।

গতকাল হঠাৎ করে উপরের তাক দুটি নামিয়ে নিচের তাকে চোখ রাখলাম। নীল, গোলাপি সব খাম। আমার নাম লেখা সেই খামে। ভেতরে সব চিঠি। একের পর এক তারিখ অনুযায়ী রাখা সব চিঠি। ব্যাঙ্কের ভল্টে বেশিক্ষণ বসে থাকার নিয়ম নেই তবুও বেশ অনেকক্ষণ বসে রইলাম সেই চিঠিগুলো হাতে নিয়ে। আর আশ্চর্য হয়ে গেলাম, আমার ভেতরে কোনো অনুভুতি জাগল না দেখে!

না। কো্নো অনুভুতিই জাগলো না। সেই আশ্চর্য ভাব নিয়েই বেশ খানিকটা সময় বসে রইলাম। কিছু স্মৃতি যেন খুঁজে পেতে বের করলাম। এই  সেই চিঠির গোছা। এক সময় যারা আমার কাছে এত মূল্যবান ছিল যে আমি তাদেরকে ব্যাঙ্কের লকারের নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিলাম। গয়নার বাক্সের সবচেয়ে গোপনতম জয়গাটি নির্দিষ্ট করেছিলাম তাদের জন্যে। মাঝে মাঝেই অকারণেই ব্যাঙ্কের ভল্টে গিয়ে লকার খুলে চিঠির গোছা হাতে নিয়ে বসে থাকতাম। খুলে খুলে পড়তাম। লোহার দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ আসতো, ম্যাম, দেরী হবে আপনার? না না। এই তো হয়ে গেছে বলে ঝটপট আবার সব বাক্সবন্দী করে চোখ মুছে হাসিমুখে বেরিয়ে আসতাম লকার রুম থেকে।

কানে বাজতো গুন গুনিয়ে -
তেরে খুশবু মে বসা খত ম্যায় জ্বালাউ ক্যায়সে
তেরে হাথো সে লিখা খত ম্যায় জ্বালাউ ক্যায়সে ...

সে কবেকার কথা? মনেও পড়ে না। বহুকাল পরে আজ আবার সেই চিঠির গোছা আমার হাতে। কিন্তু কি আশ্চর্য রকমের নিরাসক্ত আমি। এই চিঠির গোছা আজ আমার চোখে জল এনে দেয় না। নিজের মনেই হেসে ফেলি আমি, কী ভীষণ বোকা আমি! গয়নার বক্সের সবচেয়ে গোপনতম স্থানে আমি চিঠি রেখে দিয়েছিলাম! নিজেকেই প্রশ্ন করি, এই যে চিঠির প্রতি সেই টানটা আর রইল না, তার মানে কী মিথ্যে ছিল সেই অনুভুতি? সেই গোপনীয়তার প্রয়োজন আজ এমন করে ফুরিয়ে গেল কিভাবে?

নাকি আমিই বদলে গেছি? সেদিনকার সেই আমাতে আর আজকের আমাতে কত তফাৎ? এক সময় যা ছিল রাত্রি-দিনের ভাবনা আজ সেসব সত্যি বলতে কী, সব সময় মনেও পড়েও না। হয়ত
কোনো কোনো অলস দুপুরে কিংবা ঘুম না আসা কোনো একলা রাতে মনে পড়ে , কিন্তু সে নিয়ে কোনো ভাবের উদ্রেক আর হয় না। আমি এক নিরপেক্ষ দর্শক আজ। এই চিঠির গোছার। সেই সময়ের..

তোমার জন্য ছোট্ট চিঠি



এখন দেশে ও দেশান্তরে অনেক রাত।


এমন রাতে আমি অবশ্য ঘুরে বেড়াই।


৪ বা ৬নম্বর  বাস  ধরে পেস্টে চলে যাই, দানিয়ুব পেরোলেই কিছু শব্দ। এখানকার জায়গাগুলো চেনা নামে ছকে নিয়েছি নিজের মত করে। নুগ্যতিটার কে গৌহাটি বললে সকলেই দেখেছি বুঝতে পারে। আমি আসছি  গ্রাম  থেকে, স্টপের নাম দেল প্যালিদুযার। যার পরের স্টপ মস্কো, বোর্ডে নাম ফুটে ওঠে, মস্ক ভাটিয়ের। আর একটা শব্দ চিনি, ভিগালমস, দিল্লি বা মস্কো সব যায়গায়, ভিগালমস,  ট্রাম বা বাস খালি করে দাও।

চিঠি আসে কেন?


রাত্রি হলে সব থিতিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন রাত্রি নয়।

খাতা নিয়ে বসে আছি।তুমি নেই।
তুমি কোথায় যে থাকো আজকাল।

সারা ওলিপাব জুড়ে আঁশটে গন্ধ, চোখ কচলালে মনে হয় রাত্রি নেমেছে, কিন্তু এখন রাত না।
অনেক রাতে তুমি থাকো না, মনে মনে চিঠি লিখি। কখনো বা দীর্ঘএস এম এস।
এপাশ করতে করতে টিলোস রেডিও বা হিরোস্কোয়ারের শান্তি মিছিলে, মোমবাতি কত আর জ্বলবে?

উলোই উৎসা থেকে হলুদ মেট্রোতে হিরোস্কোয়ার। এখন সেখানে স্কেটিঙ নেই। ঝকঝকে রোদ।

আমার জন্যে আর কত দিন বসে থাকবেন ভ্যান গফ!

আমি বসে আছি।

আমি বসে আছি।

যে চিঠি কখনও পাঠানো হয়নি ডাকে

সারথী
দেখলে তো,এ' ক'দিন কেমন কেটে গেল? সবেতেই অগ্রাধিকার তোমার টিভি সিরিয়ালের। তোমার গুটিসুটি মারা চেহারাটা বেশ দেখতে পাচ্ছি, না গো তুমি কেবল বাংলাদেশ হয়ে কিভাবে থাকবে? বেশ তো পশ্চিমবঙ্গের নকশা হয়ে যাচ্ছ।



বাহ , বাহ বেশ উটপাখি মার্কা চেহারা দাঁড়াল একটা!


হলদিরামসের অমন নিয়ন ধাঁধানো দোকানে তুমি বসে। হুস হাস বেরিয়ে যায় সব গাড়ি। কিছু আলো ছিটিয়ে যায় শোরুমের মধ্যে।


  ষোল ডিসেম্বর


এই প্রথম আমি কোন দীর্ঘ যাত্রায় বই ছাড়া। গল্পের বই। এমন একা ঘরে ভনভনাচ্ছে টিভি। আমি বালিশ লেপ ও মোবাইলে। আসলে সবই তো পালটে যাওয়ার গল্প। দীর্ঘদিন যাত্রায়, প্রবাসকালে চিঠি লিখি না এখন। আগে প্রতি যাত্রায়, গুছিয়ে নিয়ে যেতাম আমার লেখার প্যাডগুলি। যার একপিঠে আঁকিবুকি কাটা। রং বেরং। শীতের পোষাকে পিকনিক, চিড়িয়াখানা। সেই রংটানা কাগজে, হাবিজাবি লেখ, তারপর এলোমেলো করে দাও দাও তোমার জীবনলিপি। 2,5,7 পাঠিয়ে দাও একে, 3,8,1 ওকে। বেশ মজা। কিছু দেখি আর দেখতে পাই না। মৌসুমীর গান।


তোমার সাথে অনেকক্ষণ স্কুলের কথা বল্লাম, কাল রাতে। অনেকক্ষণ। স্কুল জীবন কি শেষ হয়, অত তারহাতাড়ি। আস্তে আস্তে আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে কৃষণচুড়ায়। জানো, সবচেয়ে মজার দিন সরস্বতী পুজোর সময়। বাঁধনছাড়া উল্লাস। বিশেষত পার্শস্ত স্কুল, বালিকা বানিমন্দির। বিশাল লম্বা টিচার্সরুম জুড়ে আর্ট একজিবিশন। সেখানে আমার ছবি আছে ছরহিয়ে। আমি মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াই। লক্ষ্য করি জনতার চোখ মুখ। তেজপাতার মত ভেসে বেড়ানো নারীদের। নিচের তলায় সায়েন্স একজিবিশন। সুতরাং কর্তাত্তি মারতে সেখানেও আমি । তখন তো নেহাতই নাবালক। ক্লাস এইট। পাশের নদী দিয়ে নৌকা যায়। কিন্তু গান ভেসে আসে না। বাঈজীরা যায় না, যেমনটা দেখেছি টেলিভিশনের পর্দায়। সুতরাং, ওপারে তুমি শ্যাম এপারে আমি, মাঝে নদী বহে রে। আরও টেলিভিশনটা সাদা কালো হওয়ায়, নদীর প্রস্থ যেন বেশি বেশি ঠেকে। উলটো দিকের বেনচে বসে ঝিনুকদি সোজা একটা তেষ্ট টিউব আমার গায়ে ঢেলে দিল।সাদা জামায় ফুটে উঠছে তীব্র ম্যাজেন্টা রং। ইস। আজ আর বাড়ি যাওয়া হয়ে গেল। ওদিকে দ6রবনের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দংশন করছে শরীর জুড়ে। ঝিনুকদি হেসেই চলেছে। আমি তাকাতে পারছি না। লাল, স্কুল ইউনিফর্ম স্কার্টের তলা দিয়ে দীর্ঘ সাদা পা। সুতরাং আমার মাথা নিচু। সেই পায়ে আটকে গেল স্কুল জীবন, স্কুলের বাইরে নৌকার বেহিসেবি চলাচল। বাঈজি না যাওয়ার আপসোস।


বাইশে ডিসেম্বর-


কোচবিহারযে খাতাটায় লিখছি, চোখে পড়ল তার সর্বশেষ লাইনটি: This is a machine maid product তা দেখে আমার কেনইবা মন খারাপ হবে। হল। তবু হল। প্রতি বাংলা সিনেমাতেই যে দেখতে পাব, ঋণ স্ব ীকারে, ষ্টেটসম্যান পত্রিকা, ঘটাং ঘট, ঘটাং ঘট, ঘট ঘটাং করে বেরিয়ে আসছে সংবাদপত্রগুলি। তখন বিশেষতই মধ্যরাত। মানুষ অচেতন, মানুষের ষড়যন্ত্রে মেশিনগুলি উৎপন্ন করে চলেছে একরাশ নিউজপেপার প্রজাতি। পুরুলিয়ার বলরামপুরের সেই গালা শ্রমিকদের। বৃদ্ধ বাবা পাশে বসে, বালকটি গালা সেঁকে সামনের লম্ফতে আর অল্প অল্প ফুঁয়ে তৈরী করতে চায় উপরিতলের কারুকার্য। বৃদ্ধ বাবা মাথা নাড়িয়ে চলেছেন মেশিনের মত, হচ্ছে না, হচ্ছে না, ভেঙ্গেঁ ফেল ভেঙ্গেঁ ফেল, বেশ মজার না। সংক্রমণ কখন যে কিভাবে ঘটে। বেশ তো, গুড়িয়ে গেল সেন্টমেরী টাওয়ারদ্্বয়। মানুষ তো মিছরির ডেলা। যত পার গুড়াও, গলে গেলে তবেই তো মিষ্টি!


বাইশে ডিসেম্বর 

আমি লিখছি, আমি লিখছি তোমার ঠিকানায়

আমি লিখছি, আমি লিখছি তোমার ঠিকানায়

ঋতুবদলের সাথে এখন আর বদলায় না জলবায়ু। আশ্বিনে চৈত্রের গরমে পুড়ছে আমার ঘরের ছাদ, দেওয়াল আর আমি। বাইরে থই থই রোদ্দুর, নিস্তরঙ্গ দুপুর। কাক-পক্ষীও ডাকে না কোথাও। ফ্লাইওভারের মাঝখানে শুধু ক্রমশ উচ্চতায় বাড়তে বাড়তে অতিকায় এক দানবের চেহারা নেওয়া বাড়িটায় লোহা-লক্কড়ের ঠুক-ঠাক, যন্ত্রের ঘরর ঘরর ঘরর ঘরর শব্দ ভেঙে দিতে থাকে এই নৈঃশব্দকে। এই ক’দিন আগেও বারোমাস এখানে পাখিদের ডাক, তাদের গান, তাদের ঝগড়া আর প্রেম শোনা যেত, দেখাও যেত। রান্নাঘরে কাঠবেড়ালি যখন তখন ঢুকে পড়ত খাবারের খোঁজে। এই নিঃঝুম গ্রামের মত জায়গাটায় এখন শুধুই চারতলা সব বাড়ি। পক্ষীকুল হারাইয়াছে তাহাদের ঠিকানা। আমি হারিয়েছি ভোরের কুজন, নিঝুম দুপুরে পানকৌড়িদের জলকেলি আর আমার খোলা জানালা..

সেই কবে থেকে একটা চিঠি লিখছি। লিখেই চলেছি। একটা একটা করে অক্ষর, অক্ষর জুড়ে জুড়ে শব্দ। চিঠিটা পৌঁছায় না তোমার ঠিকানায়। হারিয়ে যায় কোথাও, মাঝপথে। নাকি আমিই ডাকে দিই না সে চিঠি? জানি না.. উত্তর আসে না কোনো.. সময় বয়ে যায়, কত কথা, নদী পথ হারায়, হারায় গতি, দিনের আলোর অন্ধকারে বসে থাকি নির্বাক, অর্থ খোঁজা শুরু করি বুঝে না ওঠা এই জীবনের..  ধুশশ.. কি হবে খুঁজে..

০২
দিকে দিকে আগমনী। আগমনী বললেই আমার যদিও মনে পড়ে যায় কিছু তেতো স্মৃতি।  তবু, তবুও বাতাসে বাজে আগমনী। এবছর এখনও কাশের দেখা আমার মেলেনি। এক সময় আমার বন্ধ হয়ে যাওয়া জানালার ওপাশেই দেখা মিলত তাদের, আশ্বিনে। এখন যেখানে বাতাসে হেলানো বারান্দায় দড়িতে ঝোলে শাড়ি-জামা-গামছা। 

পুজো শপিং। জনস্রোত বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে ওপারে, শহরে, ছুটির কলকাতায়। ঠাই নেই ঠাই নেই। মেয়ো রোডের উপর থেকে ময়দান পেরিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে হাঁটার প্রয়োজন হয় না, ভীড়ই ঠেলে নিয়ে যাবে তোমাকে। কে বলবে আজ গান্ধী জয়ন্তী, ন্যাশনাল হলিডে! খুচরো কাজ আজ থাক। ত্বরিৎ পায়ে ভীড় ঠেলে আমি আবার উল্টোপথে।

০৩
ফোনের ওপারে অদ্রীশ’দা, মৌ’দি। ‘আইলো নকশা পিঠায় চড়িয়া’র উচ্ছসিত প্রশংসায় আমি ভেসে যাই, যদিও নিজেই জানি, অতখানি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য ওই লেখা কিছুতেই নয় তবুও মন ভরে যায়, আমি ভেসে যাই গঙ্গার উপর দিয়ে, দূরে, কোনো এক শঙ্খচিল শালিকের দেশে। মনে মনে আমি তখনও লিখছি এই চিঠি, তোমাকে। কতকাল কিছু লিখি না বলতো?

দুপুরবেলায় রামস্বামী জানতে চায়, কী লিখছি? কিছুই লিখছি না শুনে বলে, সে আবার কী! সে ইংরেজীতে অনুবাদ করতে চায় ‘তিতাস কোনো নদীর নাম নয়’কে। কিন্তু বাঙাল ভাষায় লেখা জায়গাগুলোয় গিয়ে আটকে যায়, আমাকে বসতে বলে ওর সঙ্গে, সেই কবে থেকে বলে আসছে। আমার আর সময় হয় না। এবার একটু সময় দিলে হয়।

০৪
রশীদ খান। আওগে যব তুম সাজনা, আঙ্গনা ফুল খিলেগা। কানপুরের অমিত মজুমদার গানটা ইলেকট্রনিক চিঠিতে জুড়ে দিয়ে পাঠিয়েছিল সেই কবে। কি করে যেন এই গানটা গুলাম আলীর গজলের ফোল্ডারে ঢুকে পড়েছিল। মন খারাপের দুপুরবেলায় যখন গুলাম আলী শুনছি, তখন বেজে ওঠে এই গানটা। মনে পড়ে যায় রবীন্দ্র সদনে দেখা ও শোনা রশীদ খানের গান। দুঃখ হয়, এই সেদিন নজরুল মঞ্চে গুলাম আলী আর রশীদ খানের যুগলবন্দীতে যেতে পারিনি বলে। কতবার ভাবলাম, একবার যাই, গুলাম আলী শুনব সামনে বসে। কিন্তু না। হলো না। যেমন হয় না অনেক কিছুই। তেমনি সামনে বসে শোনা হলো না গোলাম আলীও।

০৫
তামান্না বলেছিল দুটো লিস্ট বানাতে, একটা লিস্টে চেনা লোকেদের নাম লিখতে আরেকটা লিস্টে আমার স্বপ্নগুলোকে লিখতে। প্রচুর প্রচুর গল্প শোনালো তামান্না এই কদিনে। প্রচুর স্বপ্ন আর প্রচুর গল্প। আমি খুব একটা মাথা কখনই ঘামাই না স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু কাল রাতে ভাবলাম। অনেক রাত অব্দি জেগে জেগে ভাবলাম। স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করলাম এবং সেই স্বপ্ন দেখা এবং সেটা পূরণ করার জন্যে আমি কি কি করতে পারি সেটা ভাবার চেষ্টা করলাম। এবং অদ্ভুতভাবে আবিস্কার করলাম, আমার কোনো স্বপ্ন নেই! আমার এমন কোনো স্বপ্ন নেই যা আমি পূরণ হওয়ার স্বপ্ন দেখি! চেনা লোক? সারি সারি সব নাম। কিন্তু চেনা কি আদৌ? নাহ। কাউকেই চিনতে পারি না। লিস্টি গেল চুলোয়। স্বপ্ন নেই, চেনা মানুষ নেই, কিচ্ছু নেই? কথাগুলো তামান্নাকে বলতে হবে।

একটা স্বপ্ন আমি খুঁজে পেতে বের করলাম, কিন্তু সেটাও আমি নিজে দেখিনি, মালু-অমিতাভ মালাকার দেখিয়েছিল। কিন্তু কথা হলো, ওটা কি আদতে কোনো স্বপ্ন? ওটা তো আমার কাজ, যা আমি করছি এবং করব। মোটামুটি কম-বেশি চারশো পাতার একটা বই। প্রায় আদ্ধেক হয়ে পড়ে থাকা লেখাটা নিয়ে গড়িমসি করছি বলে রেগে গিয়ে একদিন একটা ডিকশনারি হাতে নিয়ে মালু দেখিয়েছিল, এই দেখো, এই রকম হবে বইটা, দেখতে পাচ্ছো? হুঁ। দেখতে পাচ্ছিলাম এবং হরদম পাই। মালুকে কথা দিয়েছিলাম, অক্টোবরে শেষ করব। সে ছিল এপ্রিল মাস, দেখতে দেখতে অক্টোবরও এসেই গেল আর এই অক্টোবরে অন্তত সেটা শেষ হওয়ার কোনো চান্স নেই..

শব্দপ্রবাহ



দৃশ্যের পেছনে আছে অনেক দৃশ্য, নদীর পাশে জনপদঋতুপরিবর্তনের মত কথন থেকে অতিকথনে জ্যোৎস্না মুখরিত প্রাঙ্গন ঢেকে যায় অনাবিল কুয়াশায়শব্দের নড়াচড়া টের পাওয়া যায় অনেক গভীরেমানুষের মত আহাম্মক নয় প্রকৃতিসে ধারণ করে ক্লেদ ও অনুশোচনাডিমে তা দিতে বসা মুরগীটির একাত্মতা, নিস্কলুষ রাত্রে বিড়ালের চোখের ধূসর তন্ময়তা আর নির্ঘোষ বর্ষায় নাগরদোলনার মত দুলে ওঠা মাঠের শেষে একা দাঁড়িয়ে কদমগাছ প্রবল হর্ষে ছুঁয়ে ছুঁয়ে শৈশবের মত কোমল ও বিস্মিত শব্দপ্রবাহ
এই কথন কখনই গল্প নয়এই অনি:শেষ গল্পস্রোত নদীর মতই স্রোতস্বিনীনদীর কলধ্বনী কানে বাজে নিশ্চিত সারল্যে আর উপাচারের প্রাচুর্যে বিস্মিত আমরা কেবল লক্ষ্য করি তিতাসের নদীজন্ম রূপান্তরিত হয়েছে সময়ের রূপকল্পেকালের বল্কল খুলে এক কিশোরী মেয়ে হয়ে যাওয়া বাংলা গদ্যে সময়ের কিসসা প্রায় অন্ধকার একাকিনী প্রান্তরে নাছোড়বান্দা মশকদলের মতই ঘুরছে মাথার ভিতরে ও বাইরেসেই গুঞ্জনের স্বর অনুচ্চ কিন্তু অনস্বীকার্য

মন খারাপ হলে ভূমিকম্প হয়..





ক্যাপশন যুক্ত করুন
একসময় মন খারাপ হলে কুয়াশা হতো, মেঘ জমত, বৃষ্টি হতো, এখন ভূমিকম্প হয়। খানিক আগেই ঢাকায়, ছোট বোন মণি'র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানলাম, জাপানে নাকি আবার ভূমিকম্প হয়েছে। কোথায়, কতটা সেসব সেও বলতে পারল না, সকাল থেকে খবর দেখার বা শোনার সময় পায়নি। চিন্তায় আছে, ছুটকিটা যে জাপানেই থাকে। না। খবর আমিও দেখিনি বা শুনিনি। সময় পাইনি এমন নয়, টেলিভিশন চালানোর ইচ্ছেটাই হয়নি আজ। এখনও হচ্ছে না। তার থেকে বরং ছুটকিকে ফোন করে জেনে নেওয়া যাবে।

আজকে, আমার প্রবল মন খারাপের সময়ে জাপানে যখন ভূমিকম্প হলো, আম্মার জন্যে  আমার খুব মন কেমন করে উঠল। ভীষণ রকম মনে পড়ল মায়ের কথা। মনে হলো, কতদিন দেখি না আম্মাকে। সত্যিই তো। দিন তারিখের হিসেব করলে দেড় বছর হয়ে গেল আম্মাকে দেখেছি। দিন পাঁচ-ছয় আগেই ফোনে কথা হয়েছে, চাচিআম্মা মারা যাওয়ার পর তিন-চারবার কথা হয়েছে, তাও মনে হলো অনেকদিন কথা হয়নি। এমনিতে যে আম্মার সঙ্গে সব সময় কথা হয় তেমনটা নয়। আম্মার ফোন অধিকাংশ সময়েই বেজে যায়, আম্মা হয়ত তখন রান্নাঘরে বা একতলায়। বাড়িতে কথা বলার হলে কল যায় তাই আব্বার ফোনে। এমনিতেও গল্প যা হওয়ার তা সব সময়েই আব্বার সঙ্গেই হয়। ফোন যখন করি বেশিরভাগ সময়েই আব্বা নিচে, পুকুরপাড়ে, সেগুন গাছের তলায় হাতলওয়ালা বড় বেঞ্চিতে। এয়ারটেল কম্পানি যখন ব্যালেন্সের হিসেব দিতে থাকে তখন ফোনটা রেখে দিই। যখন এমন হয় যে, অনেকদিন আম্মার সঙ্গে কথাই হয় না, আব্বাকে সেটা বললে আব্বা কাউকে দিয়ে ফোনটা উপরে পাঠিয়ে দেয়।

আজকে আম্মাকে একবারেই পাওয়া গেল। আম্মা বলে ডাকতেই  -সামরান, কুন সময় আইবা? আমার যে ভালা লাগে না..  শেষবার যখন কথা হলো, ফোনের ওধারে তখন আম্মা কাঁদছিল, সদ্য মারা গেছে চাচিআম্মা। তারপর থেকেই অসুস্থ মা আমার আরও বেশি অসুস্থ। আমাকে বলল, তুমি কবে আইবা, আমি মইরা গেলে খবর পাইয়া যদি আইও তবে তো লাশও দেখতা পাইবা না, কবর দিয়া দিব.. আম্মাকে বললাম, আপনার মরে যাওয়ার বয়েস হয় নাই, অনেকদিন বাঁচবেন এখন, বাবুর পরীক্ষা শেষ হলেই আসব, অস্থির হইয়েন না।  আম্মা বলে, হ, তোমার চাচিআম্মার যেন মরবার বয়েস হইসিলো!

সত্যিই তো। মরে যেতে তো বয়েস লাগে না। যে কেউ যে কোনো সময়ে যে কোনো বয়েসে মরে যেতে পারেকত বয়েস হয়েছিল আমার চাচির? ষোল নাকি সতেরো(?) বছরের কিশোরী মেয়েটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিল। চল্লিশ বছর পর, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পুর্তির দিনে চলে গেল। চল্লিশ বছরের সংসারজীবন একত্রে কাটিয়েছে আম্মা আর চাচি। আব্বা বলল, তখন যুদ্ধ চলছে, তোমার চাচিআম্মারা নিজেদের বাড়ি ঘর সব ছেড়ে-ছুঁড়ে পালিয়ে গিয়ে নর্‌হায় উঠেছিল খানসেনাদের ভয়ে, সেখানেই বিয়ে। একটা নৌকায় করে বিয়ের নওশা সহ তিনজন বরযাত্রী। দাদা, আব্বা আর নওশা। ছইওলা কোনো নৌকাও পাওয়া যায়নি যাতে করে বরযাত্রী যাবে, নতুন বউ আসবে। বিয়ের বাজার বলতে খুঁজে পেতে বাজার থেকে কিনে আনা চৌদ্দ টাকা দামের একটা শাড়ি আর একটা গামছা।

বয়েসের কথা আসতে মনে পড়ল, আম্মার বয়েস কত হলো? আমরা কেউ তো আম্মার জন্মদিনও জানি না! জ্ঞান হওয়ার আগেই বাপ-মা দুজনকেই হারিয়ে মামার বাড়িতে মানুষ হওয়া মা আমার নিজের জন্মদিনও জানে না.. ও বললো, একটা ভাল দিন দেখে মায়ের জন্মদিন পালন করো না কেন সবাই মিলে? সত্যিই তো! মণিকে বললাম, সামনে পয়লা বৈশাখ, সেদিন সবাই মিলে আম্মার জন্মদিন পালন করা হোক। আমি তো যেতে পারব না, তুই সেদিন বাড়ি যাবি, আম্মার জন্যে সুন্দর একটা শাড়ি কিনবি, বাড়ি গিয়ে পায়েস রাঁধবি আর ঢাকা থেকে নিজে কেক বানিয়ে নিয়ে যাবি। ভাইয়াকে, টুটুলকে, বাবলিকে, মুন্নাকে সব্বাইকে বলে দে, সেদিন যেন বাড়ি আসে, যেমনটা আব্বার জন্মদিনে সবাই আসে। এবার থেকে পয়লা বৈশাখ আমার মায়ের জন্মদিন...

তারে স্মরণ ও করি না/ স্বপনেও দেখি না আমি/ এ আমি সঙ্গে সঙ্গে/ এই অঙ্গে অঙ্গে রাখি আমি সারাক্ষণ..

আমার উচ্চতায় ভয়। চারতলা বাড়ির ছাদের রেলিং দিয়ে নিচের দিকে তাকালেও ভয় লাগে, তলপেট কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে, বুক ঢিপঢিপ। সেদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে আন্দুলের দিকে যাওয়া অনেকটা উঁচু ফ্লাইওভারের রেলিংএর ধারে গিয়ে ভয়ে ভয়ে দাঁড়াই। নিচের দিকে তাকিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফ্লাইওভার আর তার মাঝে মাঝে আরও নিচে ফাঁকা জায়গা, সরু রাস্তার দিকে দেখতে গিয়ে আজ কেন কে জানে ভয় করল না। বরং ফ্লাইওভারের ফাঁক-ফোকরে পড়ে থাকা  নিচের ফাঁকা জমি, এঁকে বেঁকে এগিয়ে যাওয়া সরু রাস্তা যেন আমায় ডাকল! একটা শিরশিরে ভাব.. অনেক অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকি নিচের দিকে, একটুও ভয় করে না আর..


আমরা প্রতিদিনই কতবার নিচে নামি, উপরে উঠি। সিঁড়ি দিয়ে নামি, কেউ কেউ লিফ্‌টে করে নামেন, ব্রিজ থেকে নামি, আবার উঠিও। যে সিঁড়ি দিয়ে নামি, সেই সিঁড়ি দিয়েই আবার উপরেও উঠে আসি, এতে নতুন কিছু নেই। কেউ কোনো খারাপ কাজ করলে বা করে থাকলে আমরা বলি, অমুক কত নিচে নেমে গেছে, বা গিয়েছিল। সেই একই মানুষ কোনো ভাল কাজ করলে কী আমরা বলি যে অমুক বা এই মানুষটা কত উপরে উঠে গেছে? হয়ত কেউ কেউ বলে থাকেন, আমি জানি না। এই উপরে ওঠা বা নিচে নামা- একই শব্দ অথচ কত তফাৎ এর ব্যবহারিক অর্থে!


 ০২
তারে স্মরণ ও করি না/ স্বপনেও দেখি না আমি/ এ আমি সঙ্গে সঙ্গে/ এই অঙ্গে অঙ্গে রাখি আমি সারাক্ষণ- কফিল আহমেদ

আর যাব না ঠাকুরবাড়ি/ আমার রাধার নাইরে শাড়ি- গানটি সম্ভবত কফিল আহমেদেরই লেখা, সুর করা আর গাওয়া তো বটেই। সম্ববত এজন্যে বললাম, উনি গান বাঁধেন, গান করেন, কিন্তু ঠিক এই গানটি ওনারই লেখা কিনা ঠিক জানি না। সাগরকে জিজ্ঞেস করলে এক্ষুণি জানতে পারা যায় কিন্তু কি দরকার.. এমন কিছু জরুরী তো নয়.. অনেকদিন, অনেকবার গানটি অনেকভাবে অনেক জায়গায় শুনেছি, কফিল আহমেদ নিজেও গেয়ে শুনিয়েছেন। প্রতিবারেই একটা প্রশ্ন মাথায় জেগেছে, ঠাকুরবাড়ি কেন? অন্য কোনো জায়গা বা বাড়ি নয় কেন? দিন দুই ধরে থেকে থেকেই প্রশ্নটা গোত্তা মারছে মাথায়। কফিল আহমেদের সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করতে হবে..


০৩
পুরানো সেই দিনের কথা সে কি ভোলা যায়
স্মৃতি যে সততই মধুর হয় এমনটা নয়। প্রচুর টক-ঝাল-নোনতা-মিষ্টি স্মৃতিদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে অনেক অনেক তিক্ত স্মৃতিও। চিরতার পানির চাইতেও বেশি তেতো হয় কখনও কখনও সেসব। তবুও মনে পড়ে। হঠাৎ হঠাৎ আপনা থেকেই। কোনো ছোট্ট একটা টুকরো কথা বা কোনো জিনিস খুলে দেয় স্মৃতির পুরো ঝাঁপিটাকে। যা হয়ত মনে করতে চাই না, দুঃস্বপ্নেও দেখতে চাই না। আবার কখনও বা কেউ মনে করিয়ে দেয়, খেই ধরিয়ে দেয় মনের গহীন কোনো অন্দরে ঘুমিয়ে থাকা, কোনো ভুলে যাওয়া বা ভুলতে চাওয়া স্মৃতি-ঘটনা। বহুকাল আগে একটা কথা শুনেছিলাম, গ্রাম্য এক প্রবাদ- ছোট্ট এক পিঁপড়ের কামড় নাকি কখনও কখনও চেপে থাকা সাপের বিষকে জাগিয়ে দেয়। আমরা ভাবি, যে দিন গেছে, সে গেছে। ফুরিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে। কিন্তু যায় কী আসলেই?   

যায় না। কিছুই হারায় না। যখন তখন ফিরে আসে। কখন, কীভাবে-কেউ জানে না... জীবনের ধন নাকি কিছুই যায় না ফেলা.. স্মৃতিও তেমনি, কিছুই হারায় না, হারিয়ে যায় না..


০৪
আমার এই জ্বরবেলা
আমার বড় জ্বর হয়। জীবন জুড়িয়া কেবলি জ্বর। মাঝে-মধ্যে জ্বর থাকে না, তখন ঘুরে বেড়াই, দৌড়ে বেড়াই। একটু বেশিই দৌড়ে বেড়াই। কারণে বা অকারণে। আবার জ্বর হয়, আবার আমার নক্‌শী কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা, ক্যাল্‌পোল বা ক্রসিন ট্যাব। জ্বরের ফাঁকে ফাঁকেই সংসার, ছেলে-মেয়ে। কাঁথাটা এমনিতে সারাবছরই বিছানায় থাকে, ভাঁজ করা, বিছানার ধার ধরে। এবার শীত পড়ার সময়ে সে যে খাটের ভেতরকার বাক্‌সে ঢুকেছে আর বেরোয়নি। এখন আমার গায়ে মায়ের দেওয়া নক্কশী চাদর। গোটা চাদর জুড়ে কাঁথার ফোঁড়ে ফুল, লতা পাতার রংবাহারি নক্‌শা। বেশ মোটা চাদরটা, দুভাঁজে গায়ে থাকলে আর ঠান্ডা লাগে না। কাঁথার মতো ওম নেই যদিও কিন্তু মায়ের দেওয়া চাদরে যেন মায়ের হাতের ছোঁওয়া লেগে আছে এখনও। সেবার বাড়িতে গিয়ে আম্মার খাটে পাতা এই চাদরটা দেখে জানতে চেয়েছিলাম, কে করেছে কাজটা? বড় সুন্দর! কার একটা নাম যেন বলেছিল আম্মা, যাকে দিয়ে চাদরে কাজটা করিয়েছে। জিজ্ঞেস করলো, তুমার পছন্দ হইছে চাদরটা? 'বড় সুন্দর' বলাতে সঙ্গে সঙ্গেই বিছানায় পাতা চাদরটা তুলে ভাঁজ করে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আম্মা বারবার বারণ করা সত্বেও।

জ্বরটা এমনি এমনি  হয়। কারণে বা অকারণে, যখন তখন। কখনো ভালুকজ্বর তো কখনো ঘুসঘুসে। দুঃখু পেলে জ্বর হয়,  কষ্ট পেলে হয়, কোনো ভাবনা চিন্তা একটু চেপে বসলে জ্বর হয়, ঠান্ডা লেগে সর্দিজর, সিজন চেঞ্জ ইত্যাদি বা ম্যালেরিয়াও আছে। সে সব অবশ্য কম-বেশি সকলেরই হয়। আমার বাড়ির সকলেই মোটামুটি এইসব জ্বর-জ্বালা নিয়ে অভ্যস্ত বলে কেউই খুব একটা মাথা ঘামায় না এখন আর। বাবা-মা বা ভাই বোনেরা খবর পেলে অবশ্য চিন্তায় পড়ে যায়, তবে বেশির ভাগ সময়েই ওরা জানতে পারে না। রোজ রোজ কত আর অসুখ অসুখ করব।  ফোনে বোন তবু গলার আওয়াজে বুঝে যায়, বলে, তোমার এমন বারো মাসই জ্বর থাকে কেন? যখনই ফোন করি, তোমার জ্বর! বললাম, না না, বারো মাসই থাকে এমন নয়, মাঝে মধ্যেই জ্বর থাকে নাঃ-)  

জ্বর হলে বড় মাকে মনে পড়ে। ছেলেবেলাকে মনে পড়ে। হয়ত বড়বেলার সব জ্বরে তো একলা থাকার বেলা বা পালা বলেই মাকে বেশি বেশি করে মনে পড়ে। ছেলেবেলায় হওয়া জ্বর আর মা। নরম করে রাঁধা গরম ভাতে পানি দিয়ে কচলে ভাতটা ফেলে দিয়ে সেই পানিতে নুন আর লেবুর রস দিয়ে চামচে করে খাইয়ে দেওয়া। বিছানার ধার ধরে অয়েলক্লথ পেতে তাতে বালিশ রেখে সেই বালিশে শুইয়ে মাথায় পানি ঢালা, মাথা এপাশ ওপাশ করিয়ে ঘাড় অব্দি ধুইয়ে দেওয়া, মাঝে মধ্যেই মিশ্র মশলার গন্ধ মাখা ভেজা হাতে মুখ মুছে দেওয়া, হাতের আঁজলায় করে পানি নিয়ে দুই চোখেও পানি দেওয়া আর ততক্ষণ পানি ঢালতেই থাকা যতক্ষণ জ্বর না নামছে। তখন, হাতের ওই মশলার গন্ধ বড় নাকে লাগত। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিয়ে আঁচলে করে মুখ.. 

..বুকের ভেতর দলা পাকায় কষ্ট, কবে কখন কোথায় যে হারালো মধুর সেই জ্বরবেলা ..







যদি এমন হয় তবে তাই হোক